নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিশেষ আলোচনা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যারা জানতে চেয়েছিলেন তাদের জন্যই আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। নিম পাতা ভেষজ উপাদান হিসেবে এতটাই গুণাগুণে ভরপুর যে এটি খাওয়া বা ব্যবহারের ফলে অনেক উপকার পেয়ে থাকি। তাহলে চলুন নিম পাতার ব্যবহার বিস্তারিত জেনে নেই। 

নিম-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা, নিম পাতার রস কিভাবে খাবেন কখন খাবেন ত্বকের যত্নে নিমপাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন এছাড়াও আপনি কোন কোন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিম পাতার খাওয়ার অভ্যাস করবেন সে সকল বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

সূচিপত্রঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতা খুবই তেতো একটি উপাদান। নিম পাতার গাছ মোটামুটি অনেক বড় হয়ে থাকে। নিম পাতার পাশাপাশি এর ফল ধরে যা দেখতে পায় আঙ্গুর ফলের মত। পৃথিবীর যে সকল তেতোপাতা ও গাছ রয়েছে তার মধ্যে নিম গাছ অন্যতম। এই নিম গাছের পাতা ফল সবকিছুই অনেক তেতো হলেও কাজের ক্ষেত্রে অনেক উপকারী। 

আবার দেখা যায় নিম গাছের কাঠ দিয়ে অনেক আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। যেগুলো খুব সহজে ঘুনে ধরে না বা পোকায় খায় না তাই এগুলো অনেক টেকসই হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে নিম গাছের কাঠের প্রতি। তাহলে চলুন জেনে নেই নিম পাতা খাওয়ার ফলে আমরা কি কি উপকারিতা পেতে পারি সে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক। 
  • পেটের কৃমি দূর করেঃ যাদের পেটে প্রচুর পরিমাণে কৃমির সমস্যা দেখা যায় তারা ঘরোয়া উপায়ে নিম পাতার রস কয়েকদিন নিয়মিত খাওয়ার ফলে খুব সহজেই এই কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অনেক সময় বাচ্চাদের মাঝে কৃমি প্রবল আকার ধারণ করে তাই তাদেরকেও একটু খাওয়াতে পারলে অনেক উপকার হবে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ নিম পাতার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা রয়েছে যা খাওয়ার ফলে খুব দ্রুত তার সাথে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ যারা দীর্ঘদিন ধরে ওজন কমানোর জন্য অনেক চেষ্টাই করে যাচ্ছেন কিন্তু সফল হচ্ছেন না তারা চাইলে নিম পাতার ফল খেতে পারেন এতে করে খুব তাড়াতাড়ি আপনার ওজন কমে যাবে এবং নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • তলপেটে চর্বি কমাতেঃ যাদের তলপেটে অধিক পরিমাণে চর্বি জমা হয়েছে এবং তারা চাচ্ছেন এই চর্বি থেকে মুক্তি পেতে তাহলে তারা নিম পাতার গুড়া এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে তার মধ্যে একটু মধু দিয়ে খেতে পারেন। কারণ এভাবে খাওয়ার কারণে আপনার শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
  • বিভিন্ন ভাইরাস প্রতিরোধঃ অনেক সময় দেখা যায় এমন কিছু ভাইরাসের কারণে আমরা আক্রান্ত হই যা খুব সহজে সারতে চায় না যেমন হাম, পক্স ও অন্যান্য চর্মরোগ সারাতে নিম পাতা বেটে শরীরে লাগিয়ে দেওয়ার ফলে খুব তাড়াতাড়ি এই রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। 
  • এলার্জি দূর করতেঃ যাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে এলার্জির সমস্যা রয়েছে দেখা যাচ্ছে কোন ঔষধ খেয়ে কাজ হচ্ছে না তাই তারা ঘরোয়া উপায়ে প্রতিদিন নিমপাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করবেন এতে করে আপনার এলার্জি খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।
  • চোখের চুলকানি দূর করেঃ অনেক মানুষ রয়েছে যাদের চোখে এলার্জির কারণে চোখের মধ্যে চুলকাতে থাকে এবং প্রায় সময় চোখ লাল হয়ে যায় তাই তারাও নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি ঠান্ডা করার পরে চোখ পরিষ্কার করবেন এতে করে চোখের চুলকানি ভালো হয়ে যাবে।
  • মশাকে ধ্বংস করেঃ মশার উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য আপনি নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি স্প্রে বোতলে রেখে দিন এবং প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় আপনার রুমে স্প্রে করবেন এর ফলে আপনার রুমে আর মশার উপদ্রব হবে না।
  • উকুন দূর করেঃ যাদের মাথায় অনেক উকুন রয়েছে বিশেষ করে মেয়েদের মাথায় উকুনের উপদ্রব বেশি দেখা যায় তাই ঘরোয়া উপায়ে এই উকুন দূর করতে চাইলে নিমপাতা পেটে আপনার চুলে লাগাবেন এতে করে খুব দ্রুত সে উকুনগুলো ধ্বংস হবে।
  • খুশকি দূর করতেঃ ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের মাঝেই এই খুশির সমস্যা দেখা যায় বিশেষ করে শীতের সময়ে প্রায় মানুষের মধ্যে খুশকি হয়। তাই আপনি নিমপাতা বেটে মাথায় নেওয়ার কারণে খুব সহজে আপনার মাথা থেকে খুশকি দূর হয়ে যাবে।
  • ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ নিম পাতার মধ্যে শর্করার মাত্রা কমানোর প্রবণতা রয়েছে যার ফলে ডায়াবেটিসের রোগীরা প্রতিদিন সকালে আট থেকে দশটি করে নিম পাতা বেটে খেতে পারলে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ে আর কোন চিন্তা থাকবে না কারণ তখন তা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • দাঁতের গোড়া মজবুত করেঃ যাদের দাঁতে সমস্যা রয়েছে দেখা যায় দাঁতের গোড়ালি থেকে প্রায় সময়ই রক্ত পড়ে আবার শক্ত কোন খাবার খেতে পারে না এছাড়া অনেকের দাঁতে পোকা লেগে দাঁত ক্ষয় হয়ে যায় তারা যদি নিয়মিত দাঁত নিম পাতার ঢাল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করে তাহলে তাদের দাঁতের গোড়া মজবুত হবে এবং এই সকল সমস্যা দূর হবে।
  • ত্বকের যত্নে নিমপাতাঃ নিম পাতার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরির বৈশিষ্ট্য জাতকের ব্যবহার করার ফলে আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় এবং স্কিন অনেক ভালো থাকে পাশাপাশি ব্রণের সমস্যা দূর হয়।

নিম পাতার অপকারিতা


নিম পাতার কিছু সাইড ইফেক্ট রয়েছে। আমরা জানি যে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয় তাই আমরা যে জিনিসটাই খাই বা ব্যবহার করি অবশ্যই তার সম্পর্কে আগে ভালো মন্দ উভয় দিক সম্পর্কে জানতে হবে। আর এজন্য নিম পাতার যে কিছু অপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে অবশ্যই আপনার আমার জানা প্রয়োজন। আর জানার জন্য আপনি চাইলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। তাহলে চলুন নিম পাতার উপকারিতা।
  • গর্ভবতী নারীদের জন্যঃ গর্ভাবস্থায় যদি কোন মহিলা নিম পাতার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে তার জন্য বিপদ পড়ে আসতে পারে। কারণ নিম পাতার মধ্য এমন কিছু যৌগ রয়েছে যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আপনারা নিমপাতা খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলবেন।
  • শিশুদের ক্ষেত্রেঃ নিমপাতা প্রাকৃতিক উপাদান হলেও এটা কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অতিরিক্ত নিমপাতা সেবনের কারণে শিশুদের লিভারের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় শিশুদের শরীরে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সমস্যাগুলো হওয়ার কারণ নিম পাতার মধ্যে অনেক এলকালয়েড ড সক্রিয় যৌগ রয়েছে যা শিশুদের ক্ষেত্রে বহন করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। 
  • রক্তচাপের প্রভাবঃ যে সকল রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা যদি এটি অতিরিক্ত সেবন করে ফেলে তাহলে তাদের রক্তচাপ একদমই কমে যেতে পারে তাই তারা নিম পাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবে।
  • লিভারের ক্ষতি হতে পারেঃ অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত নিম পাতা সেবন করার কারণে আমাদের লিভারে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। লিভারের শক্তি ক্ষমতা কমিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে অতিরিক্ত নিম পাতা খাওয়ার ফলে। 
  • বমি বমি ভাব তৈরি হওয়াঃ নিমপাতা তেতো হওয়ার কারণে এটা অনেকেই খেতে চায় না বা খেতে চাইলেও পারেনা। তাই অনেক সময় দেখা যায় অনেক মানুষের জোর করে এটি খাওয়ার চেষ্টা করে এর ফলে সেই ব্যক্তি বমি বমি ভাব হয় এবং সমস্যা হয়ে যায়।
  • বন্ধ্যাত্বের কারণঃ নিম পাতা কিছুসময় বন্ধ্যাত্বের কারণ হিসেবে দেখা যায়। তাই আপনি গর্ববতী হতে চাইলে অতিরিক্ত নিম পাতা না খাওয়াই ভালো হবে।
  • অপারেশনের আগে পরে না খাওয়াঃ আপনি যদি কোন অপারেশনের সম্মুখীন হতে চান তাহলে তার কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে থেকে নিম পাতা খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। 

নিম পাতার রসের উপকারিতা

নিম প্রকৃতপক্ষে একটি ঔষধি গাছ এর পাতা, ফল, বাকল ও কাঠ সবকিছুই উপকারী উপাদান। কথায় রয়েছেন নিম গাছের বাতাসও শরীরের জন্য সুস্থতা নিয়ে আসে। নিম পাতার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। 


তাই নিম পাতার রসে আমরা অনেক উপকার পেতে পারি। আমরা যদি প্রতিদিন খালি পেটে নিম পাতার রস খেতে পারি এতে করে অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। তাহলে চলুন জেনে নেই যে নিম পাতার রস খেলে আমরা কি কি উপকারিতা পেতে পারি সেই সম্পর্কে। 
  • কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে
  • গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা ভালো করে
  • পেট ফাপার সমস্যা দূর করে
  • পেট ঠান্ডাও পরিস্কার থাকে
  • রক্ত পরিষ্কার থাকে
  • ঠান্ডা জনিত সমস্যা তাড়াতাড়ি দূর হয়
  • শরীরের এলার্জি দূর হয়
  • মুখে ব্রণ দূর হয়
  • পেটের কৃমি দূর হয়
  • বুকের ব্যথা সারিয়ে তোলে
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে
  • রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে
  • প্রসাবের জ্বালাপোড়া দূর করে
  • পায়খানা পরিষ্কার থাকে
  • মহিলাদের মাসিকের ব্যথা ভালো হয়ে যায়

নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

নিম পাতার রস খাওয়ার জন্য আলাদা করে তেমন কোন বিশেষ নিয়ম নেই। আপনি উপকার পাওয়ার জন্য অবশ্যই প্রতিদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস নিমের রস খাবেন। কিন্তু কথাটা বলতে যতটা সোজা খেতে কিন্তু ততটা সোজা নয়। বিষয় হচ্ছে নিম পাতার রস অনেক তেতো হওয়ার কারণে সবাই এটা খেতে পারে না। বা প্রথম দিকে খেতে অনেক কষ্ট হয়।


এর জন্য আপনি এই নিম পাতার রসের মধ্যে একটু মধু মিশিয়ে নিবেন বা ঘরে যদি মধু না থাকে তাহলে দুই চামচ চিনি গুলিয়ে এই রস খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এরপরে অনেকের বমি বমি ভাব হতে পারে তাই এই রস খাওয়ার পরে হাতের নাগালে কিছু খাবার রাখুন যার সাথে সাথে খেতে পারেন এবং খাওয়ার কারণে আপনার বমি বমি ভাব দূর হয়ে যাবে এবং তেতো ভাব চলে যাবে। 

নিম পাতার বড়ি বানানোর নিয়ম

নিম পাতার বডি বানানোর নিয়ম অনেক ভাবেই রয়েছে। নিম পাতার বড়ি খেলে আমরা কিছু রোগ নিরাময় করতে পারি। এই বড়ি বানানোর নিয়ম হলো প্রথমে নিমপাতা কাছ থেকে পেরে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর পাতাগুলোকে শীল পাটায় বাটতে হবে এবং এর মধ্যে কিছু কাঁচা হলুদ মিশাতে হবে আবার আপনি চাইলে কিছু লবঙ্গ মিক্স করতে পারেন। 
নিম-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
এরপর সব উপাদান একসাথে সুন্দর করে বেটে পেস্ট বানাতে হবে ঘন করে। তারপর আপনি দুই হাতে তালুর সাহায্যে ছোট ছোট বড়ির সাইজ করে গোল করবেন। এরপর এগুলোকে বেশি সময় ধরে রোদে শুকিয়ে নিবেন। ভালোভাবে রোদের সকালে এটা দীর্ঘদিন ধরে আপনি ঘরে মজুদ রাখতে পারবেন এবং বেশি সময় ধরে খেতে পারবেন।

এভাবে খাওয়ার ফলে দেখা যায় যে প্রতিদিন আপনার নিম পাতা বাটা বা পানিতে ফুটিয়ে খাওয়ার ঝামেলা করতে হয় না। একদিন একটু কষ্ট করে যদি বরি বানিয়ে ঘরে রাখতে পারেন তাহলে রোজ দুটো করে খেতে পারবেন। এবং এই বরি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে থাকা এলার্জি একদম গুড়া থেকে নির্মূল হবে। 

এছাড়া যে সকল উপকারিতা রয়েছে সব উপকার গুলোই আপনি পাবেন এই বরি খাওয়ার মাধ্যমে।আবার এই বড়িগুলো বাজার থেকে কিনে খেতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি নিজের হাতে ঘরোয়া ভাবে তৈরি করেন সেটা খেতেই বেশি মজা পাবেন। এবং এটি অবশ্যই পানি দিয়ে গিলে খাবেন তা না হলে এটি খাওয়ার সময় তেতো লাগবে যা খেতে সমস্যা হবে।

এলার্জি দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার

এলার্জির সঙ্গে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। এলার্জি মানেই যে শুধু চুলকানি তা নয় এটা হাচি কাশি ও হতে পারে। এলার্জির সমস্যার জন্য দেখা যায় আমরা বিভিন্ন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকি।দেখা যায় অনেক ভালো ভালো খাবার খেতে মন চাইছে কিন্তু এলার্জির আক্রমণ হবে এটা ভেবে আর খেতে পারছি না। 

আপনি এই এলার্জি দূর করার জন্য বিভিন্ন হোমিও ঔষধ বা ডাক্তারি চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই এটা থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছেন না। তাই আপনি যদি এই এলার্জি চিরতরে দূর করতে চান তাহলে ঘরোয়া ভাবে নিম পাতা খেয়ে আপনার এই এলার্জির সমস্যা দূর করুন। আপনি নিয়মিত নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করবেন। 

আর এই নিমপাতা বেটে এর রস খালি পেটে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তেতো হওয়ার কারণে যদি খেতে না পারেন তাহলে এর মধ্যে একটু মধু মিশিয়ে নিবেন এভাবে আপনি কয়েকদিন খেতে পারলে এক নিমিষেই আপনার শরীর থেকে এলার্জি দূর হয়ে যাবে। আবার চাইলে আপনি নিম পাতার বড়ি বানিয়ে ঘরে রেখে দীর্ঘদিন ধরে খেতে পারেন। 

ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

আমরা সকলেই তো তাই যে আমাদের ত্বক ভালো থাকুক। ত্বককে ভালো রাখার জন্য কত কি না করে থাকি। দেখা যায় বাজার থেকে অনেক অর্থ খরচ করে দামি প্রোডাক্ট কিনে সেটা ব্যবহার করি ত্বকের যত্নে। কিন্তু এটাতে যে আমাদের ত্বক ভিতর থেকে ভালো হবে বা স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে এটা নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারি না। 

আমাদের ত্বক শুধু উপর থেকেই সুন্দর রাখলে হবে না বরং ভিতর থেকে এর কোষ সুস্থ রাখতে হবে। এর জন্য নিম পাতার ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি টাকা খরচ না করেই ঘরোয়াভাবে ঠিকমতো নিম পাতা বেটে আপনার ত্বকে ব্যবহার করার ফলে আপনি উজ্জ্বল এবং দাগ মুক্ত স্কিন পাবেন। তাই আপনাকে নিম পাতা ও তার সাথে একটু হলুদ মেশাতে হবে। 

তারপর একটি ব্লেন্ডারে বা শিল পাটায় বেটে পেস্ট তৈরি করে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন আপনার মুখে লাগাবেন। এতে করে আপনার ত্বকের মরা কোষ গুলো হারিয়ে যাবে এবং অন্যান্য কোষগুলো ঠিক থাকবে। এর ফলে আপনার মুখের পূর্বে থাকা কালো দাগগুলো দূর হয়ে যাবে এবং মুখে উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। আবার যাদের মুখে অতিরিক্ত ব্রণ বা এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা একটি অবশ্যই ব্যবহার করে উপকৃত হবেন। 

নিম পাতা খালি পেটে খেলে কি হয়

নিম পাতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। আর আমরা যদি এই বিশেষ উপাদানটি থেকে বেশি ফলাফল পেতে চাই তাহলে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। সকালে খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার কারণে খুব দ্রুততার সাথে আমাদের শরীরে কাজ করে থাকে। সকালে খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার কারণে পেটের সমস্যা দূর করা থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা ভালো করে তোলে। 

খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের মধ্যে যে সকল বিষাক্ত বা খারাপ ব্যাকটেরিয়া রয়েছে সেগুলোকে টেনে বের করে আনতে সক্ষম হয়। আমরা নিমপাতা অনেক সময় এক ভরা পেটে বা খাওয়ার পরে খেয়ে থাকি এক্ষেত্রেও উপকার পাই। কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে নিম পাতার রস খেতে পারেন তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। কারণ বিশেষজ্ঞরা মনে করে যে খালি পেটে নিম পাতা খেলে বেশি উপকার হয়। 

নিম পাতা দিয়ে গোসল করলে কি হয়

যখন অতিরিক্ত গরম পড়ে তখন বাহির থেকে আসার পরে মনে হয় এমন পানি দিয়ে গোসল করতে যা দেওয়ার পরে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাবে। সেরকমই একটি উপাদান হলো নিম পাতা যা পানির সাথে মিশিয়ে গোসল দেওয়ার ফলে আপনি শান্তি পাবেন পাশাপাশি অনেক উপকৃত হবেন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই যে নিমপাতা দিয়ে গোসল করলে কি কি উপকার হবে।
  • ঘামের গন্ধ দূর হবেঃ শরীর অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার কারণে দুর্গন্ধ বের হয়। দেখা যায় অতিরিক্ত রোদে থেকে আসার পরে শরীর ঘেমে একদম ভিজে গিয়েছে এই অবস্থাতে আপনি নিমপাতা দিয়ে গোসল করলে আরাম পাবেন।
  • ছোপ ছোপ দাগ দূর হবেঃ অতিরিক্ত গরমের কারণে আমাদের ত্বকে রুক্ষতা ভাব দেখা যায়। অনেক সময় আমাদের ত্বকে মেছতা ভাব শুরু হয়। এইসব সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আপনি নিম পাতার গোসল করতে পারেন।
  • খুশকি দূরঃ আপনি গোসলের সময় যদি নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার মাথায় থাকা খুশকি গুলো খুব সহজে ধ্বংস হয়ে যাবে।
আপনি কিভাবে নিম পাতা দিয়ে গোসলের পানি তৈরি করবেন সেটা আগে জেনে নিন। কিছু নিম পাতা গাছ থেকে পেড়ে সুন্দর করে পরিষ্কার করে হালকা আচে পানিতে ফুটোতে দিবেন। এরপরে আপনার পানি যখন একটু হলুদ হলুদ ভাব হবে তখন বুঝবেন যে পানি রেডি হয়ে গেছে। এরপরে সেই পানি ছেকে একটি বালতিতে ঢেলে ঠান্ডা পানির সাথে মিক্স করবেন। এরপর সেই পানি দিয়ে গোসল করবেন দেখবেন কতটা আরামদায়ক লাগবে। 

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার

অনেক মানুষ রয়েছে যারা বহুদিন ধরে চর্ম রোগে ভুগছে। অনেক ডাক্তার বৈদ্য দেখিয়েছে কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। চর্মরোগ অনেক খারাপ একটি সমস্যা যা আমাদের ত্বকের উপরে ফুসকুড়ি বের হয় এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে থাকে আর। এবং এটা অনেক সময় ছোঁয়াচেও হয়ে থাকে তাই এটা অবশ্যই দ্রুত সারানো উচিত। 

অনেক বিশেষজ্ঞরা এই কথা বলে যে আপনি বাসায় গিয়ে প্রতিদিন নিমপাতা দিয়ে গোসল করুন এবং নিম পাতা বেটে এর রস খাওয়ার চেষ্টা করুন। এ কথা বলার কারণ হলো নিমপাতা একটি ঔষধি উপাদান। যা খুব সহজেই আমাদের শরীরে গিয়ে বিষাক্ত এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করে ফেলে এবং দ্রুততার সাথে নিরাময় করে তোলে। 

নিম পাতা আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে এবং শরীরের ভিতর থেকে ত্বক পরিষ্কার করে। তাই ত্বকের মধ্যে ব্রণ, একজিমা, কালো কালো দাগ সহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। তাই নিম পাতা বেটে ত্বকে লাগালে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারবে। তাই আর চিন্তা না করে চর্মরোগ থেকে বাঁচার জন্য নিম পাতার ব্যবহার শুরু করুন। 

নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয়

নিম পাতা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান। যা প্রাচীনকাল থেকে বহু চিকিৎসার কাজে সহায়তা করে আসছে। এই নিম পাতার কাজ মূলত বাংলাদেশ-ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পাওয়া যায়। নিম পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক এন্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল সহ বিভিন্ন গুনাগুন। 
নিম-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
নিম পাতা গুড়া করার পদ্ধতি হলো প্রথমে পাতাগুলো সুন্দর করে ধুয়ে নিতে হবে এরপরে রোদে ভালোভাবে শুকাতে হবে। তারপরে সুন্দরভাবে গুঁড়ো করতে হবে এবং এটা ঘরে রেখে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আপনার ত্বকে অর্থাৎ মুখে ও চুলে লাগাতে পারবেন। আবার চাইলে এই গ্রুপ পানিতে মিশিয়ে খেতে পারবেন। তাহলে আপনি আপনার সমস্যা থেকে পরিত্রান পাবেন। 

FAQ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ অতিরিক্ত নিমপাতা খেলে কি ক্ষতি হতে পারে?
উত্তরঃ অতিরিক্ত নিম পাতা খাওয়ার কারণে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া ও লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রশ্নঃ প্রতিদিন কতটুকু নিম পাতা খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ নিম পাতার রস খাওয়া উচিত।

প্রশ্নঃ নিমপাতা মাথায় দিলে কি হয়?
উত্তরঃ নিম পাতা তুলে দিলে খুশকি দূর হয়, উকুন ধ্বংস হয়, চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং মাথার ত্বক ভালো থাকে।

প্রশ্নঃ কাদের নিমপাতা খাওয়া উচিত নয়?
উত্তরঃ আপনি যদি গর্ভবতী থাকেন অথবা সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করছেন তাহলে এই অবস্থাতে নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

প্রশ্নঃ নিম পাতা খেলে কি ব্রণ ভালো হয়?
উত্তরঃ নিম পাতার মধ্যে রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।

প্রশ্নঃ নিম পাতা খেলে কি রক্তচাপ কমে?
উত্তরঃ হ্যাঁ নিম পাতা খেলে রক্তচাপ কমে।

প্রশ্নঃ খালি পেটে নিম পাতা খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ খালি পেটে খেলে বেশি উপকার পাবেন। 

উপসংহারঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যারা জানতে চেয়েছিলেন তাদের জন্য এই আর্টিকেলের মধ্যে স্টেপ আকারের সাজিয়ে লেখা হয়েছে। নিম পাতা ব্যবহারে আপনি কি কি উপকার পাবেন সে সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত লেখা আছে। এই লেখার বাইরে যদি আপনাদের আরো কোন কিছু জানার থাকে যা আমার আর্টিকেল এর মধ্যে নেই। 

তাহলে অবশ্যই মন্তব্য করবেন যেন আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারি। আমার লেখা পড়ে উপকৃত হলে শিখতে চাই ব্লগ ওয়েবসাইটকে সাবস্ক্রাইব করে সাথেই থাকুন পরবর্তী আপডেট পাওয়ার জন্য।আমার লেখার মধ্যে কোন ভুল থাকলে দয়া করে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url