গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে জানুন
গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে জানা অবশ্যই উচিত। প্রত্যেকটা মানুষেরই জীবন চলার জন্য ভালো এবং সুষম খাবার খাওয়ার প্রয়োজন পরে। কিন্তু গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটা একটু বেশি গুরুত্ব বহন করে। আপনার সন্তানের বেড়ে ওঠা তার বিকশিত হওয়া তার সঠিক ওজন রাখা এবং সুস্থ থাকা নির্ভর করে সুষম খাবারের উপর।
পরিবারের নতুন সদস্য আগমনে একজন গর্ভবতী মা কিভাবে তার খাবারের তালিকা তৈরি করবে এবং কোন খাবারগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকবে সেগুলো নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেলটি গর্ভবতী মহিলাদের খাবার নিয়ে আলোচনা করা যাক।
সূচিপত্রঃ গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
- গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
- গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার তালিকা
- যে খাবার গুলো গর্ভ অবস্থায় খাবেন না
- ১ম তিন মাসে যে খাবার গুলো খাবেন
- যে খাবার খেলে হতে পারে আপনার গর্ভপাত
- গর্ভ অবস্থায় কি ভাবে নিজের যত্ন নিবেন
- গর্ভ অবস্থায় বমি বমি ভাব দূর করুন
- গর্ভ অবস্থায় ঘরের মদ্ধে যে ব্যায়াম গুলো করবেন
- গর্ভ অবস্থায় ভিটামিন এ কতটুকু খাবেন
- উপসংহারঃ গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
- আঙ্গুরঃ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য শেষের তিন মাসে গিয়ে আঙ্গুর ফলটি না খাওয়াই বেশি উত্তম। কারণে ফলে রয়েছে রেশভেরাট্রল যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। আঙ্গুরের মধ্যে আছে তাপ উৎপাদনকারী একটি উপাদান যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- আনারসঃ আনারস একটি টক মিষ্টি জাতীয় ফল। এই ফলটির মধ্যে রয়েছে ব্রোমেলাইন নামক একটি উপাদান যা জরায়ুর পথকে কোমল করে দেয় এবং সেখান থেকে ব্যথার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও গর্ব অবস্থায় আনারস খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- পেঁপেঃ পেপের মধ্যে রয়েছে ল্যাটএক্স যা খাওয়ার ফলে গর্ভপাতের কারন হতে পারে। এই পেঁপে শুধু পাকস্থলী দের ব্যথায় তৈরি করে না পাশাপাশি সন্তানেরও অনেক ক্ষতি করে থাকে। তাই গর্ভ অবস্থায় পেঁপে না খাওয়াটাই বেশি ভালো।
গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার তালিকা
খাবারের ধরন | পরিমাণ |
---|---|
ভাত | ২.৫-৩ কাপ |
গাড়ো সবুজ রঙ্গিন শাঁক | ১-১.৫ বাটি |
হলুদ কমলা ফল ও সবজি | ১ বাটি ২৫০ গ্রাম |
ডিম | ১ টি |
দুধ | ১ গ্লাস ২৫০ গ্রাম |
মাছ/ মাংস | ১/২ টুকরা ৫০ গ্রাম |
ঘন ডাল | ২ বাটি ৫০০ গ্রাম |
যে খাবার গুলো গর্ভ অবস্থায় খাবেন না
মেয়ের একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটা আনন্দের সময় তেমনটা আবার কষ্টেরও সময় এই সময়টাতে একজন হবো মা হিসেবে অনেক লড়াই করে থাকে। একজন গর্ভবতী মহিলা তার সন্তান পেটে আসার পর থেকে নানা ধরনের জটিলতায় ভুগতে থাকে ঠিকমতো খেতে পারেনা ঘুমাতে পারে না শুয়ে বসে থাকতে পারে না মাথা ঘুরায় বমি বমি ভাব হয় ক্ষুধামন্দা লেগেই থাকে এছাড়াও রয়েছে রক্তশূন্যতা শরীর দুর্বলতা এগুলো যেন মৃত্যুদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে তাদের জীবনে।
তাই একজন গর্ভবতী মাকে কিভাবে সুস্থ রাখার জন্য সবচেয়ে আগে তার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। দেখতে হবে কোন খাবারগুলো পুষ্টিকর এবং তার জন্য ভালো হচ্ছে সেগুলো তাকে খাওয়াতে হবে। আর যে খাবারগুলো খাওয়ার ফলে তার সমস্যা হচ্ছে বা কোন ভাবেই খেতে পারছে না সেগুলো তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করা যাবে না। তাই চলুন গর্ব অবস্থায় কোন কোন খাবার খাবেন না সে বিষয়ে একটু আলোচনা করি।
- মুরগির মাংসঃ মুরগির মাংসের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী থাকে যা একটি গর্ভবতী মহিলা ও তার অনাগত সন্তানের জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন তাই এটিকে এড়িয়ে চলাই ভালো।
- পেঁপেঃ পেঁপে নামক ফলটির মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক যা একজন গর্ভবতী মহিলার ধন কে নষ্ট করে দিতে ভূমিকা রাখে। তাই এই অবস্থাতে পেঁপে না খাওয়াটাই বেশি ভালো।
- দুধ এবং দইঃ পাস্তড়িত দুধ আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য ক্ষতি কর হতে পারে। কারণ কাঁচা দুধে রয়েছে সালমোনিলা নামক রাসায়নিক যা কিশোর ও মায়ের জন্য উচিত নয়।
- অপরিষ্কার ফল ও শাকসবজিঃ যেকোনো ধরনের অপরিষ্কার ফল ও শাকসবজি কোনভাবেই আপনার খাওয়া উচিত নয়। কারণ অপরিষ্কার খাবারের অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা খুব সহজেই আপনাকে অসুস্থ করে তোলে।
- কাঁচা ডিমঃ কাঁচা ডিমের মধ্যে সালমোনিলা নামক ভাইরাস থাকে যা ত্রয়ীমাসিক সময়ে কাঁচা ডিম খাওয়া গর্ভবতী মহিলার জন্য উচিত নয়।
- রাস্তার খাবারঃ রাস্তায় অনেক ধরনের আচার চাটনি বা বিভিন্ন তেল জাতীয় খাবার পাওয়া যায় যেগুলো দেখলে স্বাভাবিকভাবেই খাওয়ার লোভ জাগে। কিন্তু কোন ভাবেই এই খাবার খাওয়া যাবে না খেলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন তাই এগুলো থেকে দূরে থাকুন।
- লবণাক্ত খাবারঃ গর্ভকালীন সময়ে আপনার নোনতা জাতীয় খাবার খাওয়ার ইচ্ছে হতেই পারে তাই বলে আপনি অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার খেতে পারবেন না এতে করে শিশুর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অ্যালকোহল জাতীয় খাবার পরিহারঃ অবশ্যই আপনাকে অ্যালকোহল জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। তা না হলে আপনার ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এছাড়াও জন্ম গ্রহণের পরে সেই সন্তানের বুদ্ধি ভিত্তিক অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১ম তিন মাসে যে খাবার গুলো খাবেন
- আঁশ জাতীয় খাবারঃ প্রথম তিন মাসের খাবারের তালিকায় বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে।কারণ আশ যুক্ত খাবার গর্ভবতী মহিলার শরীরের জন্য যেমন হজম শক্তি বৃদ্ধি করে তেমনি পুষ্টিকর বয়ে নিয়ে আসে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে আপনাকে উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন ছোলা, ওটস, বাদামি ভাত, মুগ, সবজি, ভুট্টা ও ব্লকলি ইত্যাদি খাবার খেতে হবে।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ গর্ব অবস্থায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ মাংস ডিম বেশি করে খেতে হবে। সকল ধরনের মাসিক খেতে পারেন তবে সামুদ্রিক মাছ পরিহার করাই ভালো যেমন টুনা মাছ।
- ভিটামিন এঃ গর্ভ অবস্থায় প্রচুর ভিটামিন এ খেতে হবে এবং ভিটামিন এ পাওয়ার জন্য আপনাকে রঙিন ফলমূল ও সবজি খেতে হবে এতে করে ভিটামিনের এর অভাব হবে না।
- ভিটামিন সিঃ জাতীয় সি জাতীয় খাবার যেমন টক ফল, আমড়া, আমলকি, তাজা ফল, লেবু ইত্যাদি।
- আয়রন জাতীয় খাবারঃ গর্ভবতী মহিলার জন্য অবশ্যই আয়রন জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া উচিত যেমন শাকসবজি কলমি শাক, কালো শাক, মটর শাক, শুকনা ফল ও কচু শাক ইত্যাদি এ সকল জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
- ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারঃ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার বলতে বোঝানো হচ্ছে দুধ, ব্রকলি, বিটরুট, পালং শাক, ডুমুর, চিয়াসিড, ঢেঁড়স, ডিম, বাঁধাকপি, পনির, লালশাক ও আনন্দ অয়েল ইত্যাদি।
যে খাবার খেলে হতে পারে আপনার গর্ভপাত
- কাঁচা বা কম রান্না করা তরকারি
- সামুদ্রিক মাছ
- প্রক্রিয়াজাত এবং ডেলি মাছ
- কাঁচা ডিম
- ক্যাফিন
- ভেষজ চা এবং পরিপূরক
- অ্যালকোহল
- উচ্চ ভিটামিন এ খাবার
- অতিরিক্ত টেনশন না করা
গর্ভ অবস্থায় কি ভাবে নিজের যত্ন নিবেন
- খাবারঃ প্রথমেই বলছি খাবারের কথা কারণ একজন মাকে সুস্থ থাকার জন্য তাকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। এবং সেগুলো তিনবারের জায়গায় ছয় বার খেতে হবে। যেটা খেতে ভালো লাগবে সেটা খাবে জোর করে কোন অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার দরকার নেই।
- ভ্রমণঃ গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস ভ্রমণ করা থেকে দূরে থাকতে হবে। আবার এমন উঁচু নিচু ভাঙ্গা রাস্তা আছে যেগুলো দিয়ে চলাচল করা যাবে না।
- নিয়মিত ঘুমঃ গর্ভবতী মহিলার চেষ্টা করতে হবে প্রতি রাতে 8 থেকে 10 ঘন্টা ঘুমাতে হবে। আর দিনে দুই থেকে তিন ঘন্টা ঘুমাতে হবে এবং ঘুমানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে বাম কাজ হয়ে ঘুমানোর।
- পরিধেয় বস্ত্রঃ গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই তাকে ঢিলেঢালা নরম কাপড় পড়তে হবে যেন সেখানে স্বস্তি পাওয়া যায়। এবং স্যান্ডেলের ক্ষেত্রেও নরম সেন্ডেল পড়তে হবে আর হিল জাতীয় স্যান্ডেল গুলোকে পরিহার করে চলতে হবে।
- কাজকর্মঃ অনেক গর্ভবতী মহিলাকে দেখা যায় এই সময়ে অনেক ভারি ভারি কাজ করে থাকে। কিন্তু এটা কখনোই করা উচিত নয়। চেষ্টা করবেন সংসারের ছোটখাটো দুই একটি কাজ করে আর বড় কাজ না করাই আপনার জন্য বেশি উত্তম হবে।
গর্ভ অবস্থায় বমি বমি ভাব দূর করুন
- বমি বমি ভাব হলে আদা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- পেপারমেন্টের সুবাস নিন।
- আপু পাকসার এবং আকুপ্রেশার ব্যবহার করুন
- লেবুর স্লাইস করে খাওয়ার চেষ্টা করুন
- বমির ভাব দূর করতে যে মসলা আছে সেগুলোকে কাছে রাখুন এবং খাওয়ার চেষ্টা করুন
- সঠিকভাবে হাইড্রেটের থাকুন।
- যেগুলা খেতে ভালো লাগে না সেগুলো পরিহার করুন।
- সঠিক ডায়েট চার্ট তৈরি করুন।
গর্ভ অবস্থায় ঘরের মদ্ধে যে ব্যায়াম গুলো করবেন
- অতিরিক্ত লাফঝাপ না করা
- ভরা পেটে ব্যায়াম না করা
- দাঁড়িয়ে কোমর বাঁকাবেন না
- বাস্কেটবল ভলিবল এ জাতীয় খেলা থেকে দূরে থাকুন
- ব্যায়াম করার পর যদি অতিরিক্ত দুর্বল লাগে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেন।
গর্ভ অবস্থায় ভিটামিন এ কতটুকু খাবেন
- হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও কিডনি তৈরিতে ভিটামিন এ দরকার হয়।
- সুস্থ ত্বক, হাড় মজবুত, শ্বাসতন্ত্র, ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্র গঠনে ভিটামিন এ এর ভূমিকা বেশি।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে
- চোখের সুস্থতা বজায় রাখে
- ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে
- রাতকানা রোগ হতে দূরে রাখে
- স্নেহ বা ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিপাকে সহায়তা করে
- প্রসবের পরে শরীরের টিস্যু গুলোকে সুস্থ রাখে এবং আগের অবস্থায় ফিরে যেতে সাহায্য করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url